logo
ads

পাক অভিনেত্রী মীরা সেতির প্রথম উন্মোচন: পর্দার উজ্জ্বলতার পিছনে লুকিয়ে ছিল গভীর ক্ষত

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশকাল: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৭ পি.এম
পাক অভিনেত্রী মীরা সেতির প্রথম উন্মোচন: পর্দার উজ্জ্বলতার পিছনে লুকিয়ে ছিল গভীর ক্ষত

সংগৃহীত

পাকিস্তানি অভিনেত্রী ও লেখিকা মীরা সেতি, যিনি তার সূক্ষ্ম অভিনয়ের জন্য দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছেন, দুই বছরের নীরবতা ভেঙে প্রথমবার নিজের বিবাহবিচ্ছেদের কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। সম্প্রতি ডিজিটাল চ্যানেল 'ফেমিনুস্তানি'-র এক অনুষ্ঠানে সাবাহাত জাকারিয়ার সঙ্গে কথোপকথনে তিনি জানান, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তার বৈবাহিক জীবন নীরবে শেষ হয়ে যায়। এই ঘটনা তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও সংবেদনশীল সময় ছিল, যা তিনি এতদিন গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু আজ, দুই বছর পর, তিনি এই অভিজ্ঞতাকে শেয়ার করে অনেক নারীকে অনুপ্রাণিত করতে চান। 
মীরা বলেন, "কিছু অঙ্কাহি নাটকের শুটিং চলাকালীন আমি বিবাহবিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। এটি ছিল আমার জীবনের এক অত্যন্ত সংবেদনশীল ও কঠিন সময়। কাজের জন্য কৃতজ্ঞ ছিলাম, কারণ সেটাই আমাকে স্থির থাকতে সাহায্য করেছিল। প্রতিদিন শুটিংয়ে যেতাম। সাজল, আহমেদ সাব ও নাদিম ভাই বিষয়টি জানতেন এবং আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন।" এই সময়ে তার চরিত্র 'সামিয়া'-র ভূমিকা, যিনি স্বামীর প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন, তার নিজের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু মীরা বলেন, চরিত্রের চেয়ে কাজের ব্যস্ততাই তাকে মানসিকভাবে টিকিয়ে রেখেছিল। বন্ধু-পরিবার, সহকর্মী এবং এমনকি অচেনা মানুষদের সমর্থন তার এই 'কোমল, সূক্ষ্ম কিন্তু শক্তিশালী' সময়টি অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে। 

পর্দার উজ্জ্বলতা: দর্শকদের মনে অমলিন ছাপ
পাকিস্তানি টেলিভিশন জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মীরা সেতি। ১৯৮৭ সালের ১২ জানুয়ারি লাহোরে জন্মগ্রহণকারী তিনি সাংবাদিক দম্পতি নাজাম সেতি ও জুগনু মহসিনের কন্যা। ভাই আলি সেতির গান 'পাসুরি' বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যা মীরার পরিবারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও উজ্জ্বল করে। লাহোর গ্রামার স্কুল, চেলটেনহ্যাম লেডিজ কলেজ এবং ওয়েলসলে কলেজ থেকে ইংরেজি ও দক্ষিণ এশীয় অধ্যয়নের ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ওয়েলসলে কলেজের কনভোকেশন স্পিকার হয়ে প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে ইতিহাস রচন করেন। পরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে রবার্ট এল. বার্টলি ফেলো হিসেবে কাজ করেন এবং পাকিস্তান নিয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য লিখেছেন। 
অভিনয় জগতে ২০১৩ সালে 'সিলভাতেইন'-এ লিডিং রোলে ডেবিউ করেন মীরা, যেখানে আমিনা শেখের সঙ্গে তার কেমিস্ট্রি দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল। পরবর্তীকালে 'মোহব্বত সুব কা সিতারা হ্যায়', 'প্রীত না করিয়ো কই', 'পরিস্তান', 'চুপকে চুপকে', 'দিল বনজারা', 'জানম' এবং সাম্প্রতিক 'কিছু অঙ্কাহি'-তে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে 'কিছু অঙ্কাহি'-তে 'সামিয়া' চরিত্রে তিনি একজন আনুগত্যশীল কিন্তু যুক্তিবাদী নারীকে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তার নিজের জীবনের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিলে যায়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় দর্শকরা তার এই নাটকগুলোর জন্য তাকে ভালোবাসেন, কারণ তার অভিনয়ে লুকিয়ে থাকে জীবনের সূক্ষ্মতা এবং নারীর অভ্যন্তরীণ শক্তি। এছাড়া, ২০২১ সালে তার প্রথম উপন্যাস 'আর ইউ এনজয়িং?' (ক্নপফ ও ব্লুমসবুরি প্রকাশিত) পাকিস্তানের সমকালীন জীবন, পরিচয়, কামনা, ক্ষমতা ও ধর্ম নিয়ে গল্পের সংকলন হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তার এই বহুমুখী প্রতিভা তাকে শুধু অভিনেত্রী নয়, একজন চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। 

ব্যক্তিগত জীবনের ছায়া: ভালোবাসার স্বপ্ন থেকে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা
২০১৯ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরিবারের সামনে মীরা বিয়ে করেন শৈশববন্ধু অর্থনীতিবিদ বিলাল সিদ্দিকির সঙ্গে। এক বছর আগে এনগেজমেন্টের পর এই বিয়েটি ছিল তাদের দীর্ঘ সম্পর্কের ফল। মীরা নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর শেয়ার করে বলেছিলেন, "জীবনের ভালোবাসাকে বিয়ে করলাম।" কিন্তু এই সুখের গল্প মাত্র চার বছর স্থায়ী হয়নি। ২০২৩ সালের মার্চে নীরবে বিচ্ছেদ হয়, যা তিনি প্রকাশ্যে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এখন তিনি বলছেন, বিবাহবিচ্ছেদ শুধু একটি ঘটনা নয়, এটি একটি 'গল্পের ধস'—যা নারীদের পরিচয়, স্থান এবং অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
মীরার কথায়, সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে এখনও কলঙ্ক আছে। তিনি স্মরণ করেন, কয়েক বছর আগে এক নাটকে তিনি বলেছিলেন, "বিবাহবিচ্ছেদিতা নারী সমাজের কাঁটা হয়ে ওঠে।" আজও সেই লাইন তার মনে বাজে। পাকিস্তানের বিনোদন জগতে খোলামেলা পরিবেশ বাড়লেও, বিবাহবিচ্ছেদ নারীদের মানসিক যন্ত্রণা এবং সামাজিক পরিচয়ের সংকট নিয়ে আসে। মীরা বলেন, এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সময় লাগে, কিন্তু সমর্থন এবং আত্মপরিচয়ের খোঁজই সবচেয়ে বড় শক্তি। তার এই উন্মোচন শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি অনেক নারীর গল্পকে প্রতিফলিত করে—যারা পর্দার আলোয় হাসি ছড়ান কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে অন্ধকার লড়াই করেন। 

পর্দা vs বাস্তব: দ্বৈত জীবনের দ্বন্দ্ব
মীরার জীবন যেন একটা নাটকের মতো—পর্দায় উজ্জ্বলতা, ব্যক্তিগত জীবনে ছায়া। 'কিছু অঙ্কাহি'-র শুটিংয়ের মাঝে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা সহ্য করা তার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। সহ-অভিনেতা সাজাল আলি, বিলাল আব্বাস খান এবং পরিচালক নাদিম বাইগের সমর্থন তাকে টিকিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, কাজ তার মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে, যা বিচ্ছেদের পর 'আত্মপরিচয় খোঁজা'র সময়ে সাহায্য করেছে। এই অভিজ্ঞতা তার লেখালেখিতে প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে তিনি পাকিস্তানের নারীদের জটিলতা তুলে ধরেন। বাংলাদেশি দর্শকরা তার নাটক দেখে অনুপ্রাণিত হন, কিন্তু এখন তার এই সাহসী উন্মোচন তাদেরকে আরও কাছে টেনে নেবে—কারণ এটি দেখায়, তারা যেমন সাধারণ নারী, তেমনি অসাধারণ যোদ্ধা। 
মীরার এই কথা শুধু তার গল্প নয়, এটি একটা আহ্বান—সমাজকে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে। তার ভবিষ্যতের কাজগুলো এই অভিজ্ঞতাকে আরও গভীরতা দেবে বলে মনে হয়।

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ